ইমাম প্রশিক্ষন

 

বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর মধ্যে “ইমাম প্রশিক্ষণ” বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদের ইমাম সাহেবদের সঠিকভাবে ইমামতির যোগ্যরূপে গড়ে তোলার পাশাপাশি আর্থÑসামাজিক সকল কর্মকান্ডে ইমামগণ যাতে ভূমিকা রাখতে পারে সে সকল বিষয়ে ইমামদেরকে সচেতন করে তোলাই ইমাম প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য। উল্লেখ্য যে ইমাম প্রশিক্ষণের জন্য ইমামদের যাতায়াত, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, বিভিন্ন ধরণের পুরস্কার, খাতা, কলম, সার্টিফিকেট ইত্যাদি সকল জিনিসসহ যাবতীয় ব্যয়ে মসজিদ মিশন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার সহায়তায় ব্যবস্থা করে। মিশনের কেন্দীয় দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রী, এস. পি. স্থানীয় মেয়র, ডি. সি সহ বিভিন্ন স্তরের সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তাগণ এ সমন্ত প্রশিক্ষণ বিষয়ভিত্তিক আলোচনা রাখেন।
কেন্দ্রীয়ভাবে এবং জেলা, থানা ও ইউনিয়ন ভিত্তিক ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যাতে ইমামগণ শুধু মসজিদেরই নন বরং সমাজেরও ইমাম হিসেবে নিজেদের যোগ্যরূপে গড়ে তুলতে পারেন।
মাসয়ালা মাসায়েল শিক্ষা, সাময়িক পাঠ, সহীহ কুরআন শিক্ষা, দায়িত্বশীল ও মুয়াল্লিম প্রশিক্ষণসহ হিফ্জ, কেরাত হামদ ও না’ত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা।
মসজিদ কেন্দ্রীক সংগঠিত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র বিমোচন ইত্যাদি কর্মসূচীর সাথে সংশ্লিষ্ট সদস্যÑসদস্যাদের ইসলামী ও সামাজিক বিভিন্ন দিক সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
হজ্জ প্রশিক্ষণ ঃ অভিজ্ঞ আলেমদের সমন্ব^য়ে বিনামূল্যে হজ্জ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। মসজিদ মিশন কেন্দ্রীয়ভাবে এবং জেলা ভিত্তিক হজ্জ প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করে থাকে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ ঃ শিক্ষকদের নৈতিক ও ইসলামী জ্ঞান দেয়ার বাস্তব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

ইমাম প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠ ইমামদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান

ইমাম প্রশিক্ষণে পুরুষ্কার বিতরণ করছেন দেশবরেণ্য আলেম শাইখ মাওলানা মহিউদ্দী খাঁন।

দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠনে ইমামদের ভূমিকা

অধ্যক্ষ মুহাম্মদ যাইনুল আবেদীন

 

চলমান বিশ্বের উন্নত-অনুন্নত প্রায় সকল দেশেই একটি জাতীয় রোগ হানা দিয়েছে। এ রোগ যেমন অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে। তেমনি কতিপয় লোককে টাকার পাহাড় গড়ে দিচ্ছে। অন্য দিকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কর্মকান্ডকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। রোগটির নাম আমরা সকলেই অল্প-বিস্তার জানি তাহল ‘দুর্নীতি’।

বাংলাদেশের মত দরিদ্র ও অনুন্নত রাষ্ট্রে ও আঘাত হেনেছে ঐ সর্বনাশা ব্যাধি। এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আমরা বিশ্বের বুকে ১ম স্থান দখল করার দূর্ভাগ্য ও অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্ব যখন অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে উন্নতশিখরে আসিন হয়েছে- তখন আমরা দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বের কাছে শ্রেষ্ঠ দূর্ণীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছি। দুর্নীতির এ রাহুর দশা আমাদের কতিপয় লোভী ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তির কাধে ছওয়ার হয়ে দেশের সর্বস্তরে এর কুপ্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে। ফলে দেশ আজ চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও হুমকির সম্মুক্ষিন। এ দূর্ণীতি নামক রোগটি কারো মাঝে একবার আসন করে দিতে পারলে সহজেই তা বিদূরিত হয় না। নীতি নৈতিকতাকে ধ্বংস করে দেশের সার্বিক অকল্যাণ সাধন সহ সাধারনের প্রাপ্য ও অধিকার কে ভূলুন্ঠিত করা পর্যন্ত ঐ ব্যাধি অবস্থান করে।

দুর্নীতি পরিচিতিঃ

ইংরেজী Corruption শব্দের বাংলা অর্থ দুর্নীতি বাংলায় বিকৃত, কলুষিত, দূষিত, পচা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার করা যায়। সাধারণ ভাবে নিয়ম বহির্ভূত কোন কর্ম সহজে যা জনগণ ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিরোধী তাহাই দুর্নীতি। ঘুষ, স্বজন প্রীতি, পাচার, কেলেংকারী, সরকারী বিধি লংঘন হয় এমন কার্য্যাবলী দুর্নীতির উল্লেখ যোগ্য বিষয়। আইনের ভাষায় যাকে Misconduct বলা হয়। দুর্নীতি বর্তমানে আমাদের জাতীয় রোগে পরিণত হয়েছে এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মহৌষধ দরকার। এ জটিল বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাববার সময় এসেছে। এই ভাবাটা শুধু সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নয়, ভাবতে হবে আমাদের নৈতিক চেতনা বোধ এবং অনাগত ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে। দুর্নীতির ভায়াবহতা সুদুর প্রসারি বিস্তার লাভ করেছে। ফলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সার্বভৌমত্ব নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দেশের

আভ্যন্তরিন আইন শৃংখলার অবনতিসহ রাষ্ট্রীয় উন্নতি ও জনগণের স্বার্থ বিঘিœত হচ্ছে।

আমাদের দেশে এ দুর্নীতি কোন নব আবিষ্কার নয়। এ ভয়াবহ ব্যাধির কালো ছায়ার আবির্ভাব হয় উনবিংশ শতাব্দির ও বহু পূর্বে। বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন আমল থেকে অশুভ সুচনা হয়ে ধীরে ধীরে পাকিস্তান শাসন ও স্বাধীনতা উত্তর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঐ কালো অধ্যায় আজ বহু ডাল পালা ও শক্ত শিকড় গ্রথিত হয়ে রাষ্ট্রীয় প্রায় সিংহভাগ কর্মকান্ডেই ছড়িয়ে গেছে। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীসহ সরকারী বেসরকারী আমলা, কর্মকর্তা, কর্মচারী, সকল শ্রেণীর পেশা জীবি ঐ রোগে রোগাক্রান্ত। অবস্থা এমন হয়েছে যে, যিনি দুর্নীতি করবেন না, তিনি সমাজে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেন না। উপরন্ত সে সকলের ঠাট্টা ও উপহাসের পাত্র হয়ে থাকে। জাতিকে এ ভয়াবহ ব্যাধি থেকে রক্ষা করতে না পারলে, অচিরেই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিবে এবং রাষ্ট্র একটি অকার্য্যকর দেশ হিসেবে আক্ষায়িত হবে। দেশের কর্মকান্ডে ও উন্নতি ব্যহত হয়ে কিছু দূর্নীতিগ্রস্থ ব্যতিত সকল মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে চলে যাবার আশংকা করা হচ্ছে। দুর্নীতি মুক্ত জাতি গঠনে প্রথমেই দুর্নীতি কি তা চিহ্নিত করতে হবে। এর কারন ও প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

দুর্নীতি বলতে যা বুঝায়ঃ

দুর্নীতি বলতে শুধু সরকারী কর্মকান্ডই সীমাবদ্ধ নয়। সরকারী বেসকারী মালিকানাধিন কম্পানি-ইন্ডাষ্ট্রিজ এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোও দুর্নীতি থেকে মুক্ত নয়। তবে সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে এর উপস্থিতি বেশী। টেন্ডার বাঁজীতে দুর্নীতি, চাকুরী দানে দুর্নীতি, সরকারী কর দানে দুর্নীতি, সরকারী সম্পদ যথা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির ক্ষেত্রে দুর্নীতি। খাস জমি দখলের ক্ষেত্রে ও রয়েছে দুর্নীতি ছড়াছড়ি। কর্ম স্থলে কর্মে ফাঁকী দেয়া, নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীদের থেকে বিভিন্ন ভাবে আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণ, প্রাপ্য সুযোগ তথা পদন্নতিসহ সরকারী সুযোগ সুবিধার মত বিষয়ে হয়রানী, কোন কোন ক্ষেত্রে বিশাল অংকের টাকা দাবী করা। সরকারী বিভিন্ন অনুদান অত্মসাৎ করা, রাজস্ব ফাঁকী দেয়া, বৈদেশিক পণ্য সরকারী বিভি লংঘন করে আমদানী করা। সরকারী আইন ফাঁকি দিয়ে দেশীয় পণ্য-দ্রব্য বিদেশে পাচার করা। অবৈধ অস্ত্র আমদানী ও এর অসদ ব্যবহার উত্যাদি বিষয় গুলো দুর্নীতির মধ্যে অন্যতম।

কারনঃ

কোন লোক তার জন্ম থেকে দুর্নীতির এ গুণ নিয়ে আসে না। অতিলোভ, উচ্চাভিলাষ, নৈতিকতা বোধের অভাব, ধর্মীয় অনুশাসন অগ্রাহ্য, রাসূল (সা) এর আদর্শ বর্জন পরকালিন ভয় ভীতি না থাকা এর কারন বলে চিহ্নিত করা যায়। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি সেটা হল তার মাঝে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির অভাব, এর ফলে অন্যের আমানত, কর্মের দায়িত্বানুভূতি, স্বজন প্রীতি, চুরি, ঘুষ আদান প্রদান, ধোকা ও বেইনসাফীর মত জঘন্য অপকর্ম সংঘঠনে সে কোন পরওয়া করেনা। তাছাড়া দূর্নীতি দমনে কঠিন শাস্তির বিধান না থাকা, আর থাকলে ও তার যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া ও একটি অন্যতম কারন হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

প্রতিকারঃ

দুর্নীতি দ্বারা ব্যক্তি পর্যায় থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত প্রকাশ্য ক্ষতি লক্ষ করা যায়। যথাযথ শাস্তির বিধান ও নৈতিক চরিত্রের পরিবর্তন করা হলেই এ মহা রোগ বিলুপ্ত হতে পারে। নৈতিক চরিত্র গঠন হয় যেহেতু শিক্ষা থেকে, তাই শিক্ষা যদি হয় আত্মসুদ্ধি ও আদর্শ ভিত্তিক, তাহলে সে শিক্ষা জাতির নৈতিক চরিত্রকে সুন্দর করতে সক্ষম, আর নৈতিক শিক্ষার বাস্তব রুপ হল ওহী ভিত্তিক শিক্ষা। এই শিক্ষা দ্বারা একজন মানুষ তার চারিত্রিক কলুষতা দূর করা, আত্মশুদ্ধি করা, পার্থিব লোভ দূর সহ জাগতিক মোহ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়। ফলে তার মাঝে নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি হওয়া থেকে দুর্নীতির মত কালো অধ্যায়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটেনা। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে অহীভিত্তিক দ্বীনি শিক্ষার মাধ্যমে ইমামদের ভূমিকা অসামান্য। সে ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে ইমামগণ যে সকল ভূমিকা রাখে তার মধ্যে আমানতের যথাযথ সংরক্ষন, কর্মে নিষ্ঠাবান হওয়া, অর্থের প্রতি অতিমাত্রায় লোভ হ্রাস, নৈতিকতা বোধ সৃষ্টি, অন্যের হকসমূহের প্রতি সচেতনতা, স্বজন প্রীতি ও ঘূষের ক্ষেত্রে আল্লাহ ভীতি ইত্যাদি বিষয় গুলো অন্যতম। ইমাম-উলামাগণই সমাজ থেকে সকল প্রকার দুর্নীতি ও অন্যায়কে দূর করতে সক্ষম যার বাস্তবতা বিস্তারিত আকারে নিম্নে আলোকপাত করা হল।

দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থাঃ

আমাদের দেশে দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থা অহী ভিত্তিক শিক্ষিা ব্যবস্থা। যা মূলত পবিত্র আল-কুরআন ও বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূল (সা) এর হাদীস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এ শিক্ষার সূচনা হয় ঐশী বাণীর সর্ব প্রথম গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘দারুল আরকাম থেকে।’ রাসূল (সা) কে ধরায় যে দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করা হয় তাহাই আজ দ্বীনি শিক্ষা দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর ঘোষনা হচ্ছে।

هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ (سورة الجمعة-২)

অর্থাৎ তিনি সেই সত্ত্বা যিনি নিরক্ষরদের মধ্যে থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদেরকে তাঁর আয়াতসমূহ পড়ে শুনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ ইতোপূর্বে তারা সুস্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা জুময়াহ, আয়াত-২)

এ আয়াত দ্বারা রাসূল (সাঃ) কে শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, রাসূল (সা) ছিলেন আদর্শ শিক্ষক ও সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক। রাসূল (সা) নিজেই বলেছেন-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ مِنْ بَعْضِ حُجَرِهِ فَدَخَلَ الْمَسْجِدَ فَإِذَا هُوَ بِحَلْقَتَيْنِ إِحْدَاهُمَا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ وَيَدْعُونَ اللَّهَ وَالْأُخْرَى يَتَعَلَّمُونَ وَيُعَلِّمُونَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلٌّ عَلَى خَيْرٍ هَؤُلَاءِ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ وَيَدْعُونَ اللَّهَ فَإِنْ شَاءَ أَعْطَاهُمْ وَإِنْ شَاءَ مَنَعَهُمْ وَهَؤُلَاءِ يَتَعَلَّمُونَ ’’وَإِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا،، فَجَلَسَ مَعَهُمْ(ابن ماجه ১-২৬৫)

অর্থাৎ আমি শিক্ষক রুপে প্রেরিত হয়েছি। (ইবনে মাজাহ-১-২৬৫)

অন্য হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন-

عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انما بعثت لاتمم مكارم الاخلاق (البيهقى ১১-১৯৩)

অর্থাৎ আমি প্রেরিত হয়েছি উত্তম স্বভাবের পূর্ণতা স্বরুপ। রাসূল (সা) ছিলেন আদর্শ শিক্ষক এবং উত্তম আদর্শের অধিকারী। একদিন রসুল (সঃ) তার একটি রুম থেকে মসজিদে ঢুকে দুটি মসলিস দেখলেন, একদল কুরআন তেলায়াত করছেন এবং আল্লাহর দোয়া করছেন আর অপর দলটি শিক্ষা দান করছেন এবং শিক্ষা গ্রহন করছেন। রসুল (সাঃ) বললেন প্রত্যেকেই ভালো করছে। যারা কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করছেন তাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করলে দিতে পারেন আবার নাও পারেন। আর অপর দলটি জ্ঞাণার্জন করছেন শিশ্চয় আমি এক ……….. অতঃপর তিনি তাদের মজলিসে বসলেন।

আল্লাহ তার চরিত্র সম্মন্ধে বলেছেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا (الأحزاب-২১)

অর্থাৎ (হে মানব সকল) আল্লাহর রাসূলের মাঝে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।

রাসূল (সা) এর আদর্শে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান দ্বীন শিক্ষা, কুরআন-হাদীসসহ পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে দিক নিদের্শনা দিয়ে থাকে। যদি ও আমাদের দেশে প্রচলিত দূ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, আধুনিক ও ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা। তবে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা রাসূল (সা) এর আদর্শ, কুরআনের বিধানাবলীর বাস্তব গ্রয়োগ সম্ভব হচ্ছেনা। পক্ষান্তরে ইসলামী শিক্ষা আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি রাসূল (সা) এর আদর্শ ও আল কুরআনের পূর্ন বাস্তবয়ান করার পূর্ণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু ইহকালিন শিক্ষা নয় বরং বৈধ-অবৈধ এর পূর্ণ ধারণা, হালাল হারামের পার্থক্য, ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক নিদের্শনা দেয়া হয়। মোট কথা দ্বীনি শিক্ষা একজন মানুষকে ইহ জগতের সফলতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে সজাগ করে তোলে।

দূর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠনে ইমামদের ভূমিকা

 

       আমানতের পূর্ণ সংরক্ষনঃ

যার মাঝে আমানত রক্ষার কোন প্রয়োজন উপলব্ধি হয়না এবং পরকালে এর পুংখানুরুপে হিসাবের কাঠ গড়ায় দাড়ানোর ভীতি যার মাঝে জাগ্রত হয় না, শুধুমাত্র পার্থিব শাস্তির বিধান তাকে সে আমানতের প্রতি দায়িত্ববান হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম নয় এবং তাকে দুর্নীতি হতে ও বিরত রাখা অসম্ভব। তাই ইমামগণ তৌহিদী শিক্ষার বলে বলিয়ান হয়ে আমানতের পূর্ণ সংরক্ষনের উপর জোর দিবেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে বলেন-

إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا (৫৮-النساء)

অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে তোমরা যেন আমানত তার মালিকের কাছে প্রত্যাবর্তন কর। (সূরা নিসা আয়াত- ৫৮)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ (الأنفال-২৭)

হাদীসে এসেছে-  لاايمان لمن لا امنة له ولا دين لمن لا عهد له

“যার আমানত নেই তার ঈমান নেই, আর যার ওয়াদা ঠিক নেই সে দ্বীনদান না।”

অথার্ৎ হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহ, তার রাসূল ও তোমাদের উপর ন্যাস্ত আমানতের খেয়ানত করো না, অথচ তোমরা এর গুরুত্ব জান। (সূরা আনফাল আয়াত- ২৭) রাসূল (সা) বলেছেন- لاايمان لمن لاامانةله  অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির ঈমান নাই যার আমানত নাই।

       ঘুষ আদান-প্রদানের ভয়াবহতাঃ

ঘুষ হল দুর্নীতির মধ্যে অন্যতম, যে সমাজ বা রাষ্ট্রে ঘুষ আদান প্রদান করা হয় সে সমাজে কখনো শান্তি ফিরে আসে না। আল্লাহ তায়ালা এ ব্যপারে ঘোষণা দিয়েছেন- وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ (১৮৮البقرة) অর্থাৎ তোমরা একে অন্যের সম্পদে অবৈধ পন্থায় ভোগ করো না (সূরা বাকারা আয়াত- ১৮৮) রাসূল (সা) বলেছেন-

لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الرَّاشِي وَالْمُرْتَشِي( أحمد, نسائي)

অর্থাৎ ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ের উপর আল্লাহর অভিশাপ (أحمد, نسائي)।

অন্য হাদীসে বলা হয়েছে-  الرسى المرسى كلا في النار “ঘুষদাতা-ঘুষগ্রহীতা উভয় জাহান্নামী।”

       চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধঃ

চুরি, ডাকাতি অন্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও অত্মসাৎ করনের মত কাজ গুলো মানুষের দ্বারা তখনই হয় যখন তার মাঝে দ্বীনি জ্ঞান না থাকে। দ্বীনি শিক্ষা দ্বারা এ সকল অপরাধের পার্থিব ও পরকালিন যে ভয়াবহতা রয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা পাওয়া যায় যেমন আল্লাহ বলেছেন-

وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ (سورة المائدة-৩৮)

চোর এবং চোরনী তোমরা তাদের হস্ত কর্তন কর, এটা তাদের দুষ্কর্মের প্রতিদান।

হাদীসে বর্ণিত আছে- রাসূল (সা) বলেছেন-

وَايْمُ اللَّهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا(متفق عليه)

অর্থাৎ আল্লাহর শপথ যদি ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ (সা) চুরি করতো তাহলে মুহাম্মদ (সা) তার হাত কেটে দিত। (বোখারী )

       ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাঃ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হলে সমাজে কোন অন্যায় কাজ সংঘঠিত হতে পারতো না। দ্বীনি শিক্ষা ন্যায় বিচার এর ক্ষেত্রে সূস্পষ্ট বিধান ও ধারনা দিয়ে থাকে যেমন দুর্নীতি প্রতিরোধে রাসূল (সা) দৃপ্ত কন্ঠে বলেছেন-

مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ (مسلم)

অর্থাৎ তোমাদের কোন কেউ যদি অসৎ কাজ সংঘঠিত হতে দেখে সে যেন তা হাতের শক্তি প্রয়োগ করে, তা প্রতিহত করে যদি সে শক্তি না থাকে তাহলে যেন মুখের কথা দ্বারা প্রতিহত করে, যদি সে শক্তিও না থাকে তাহলে যেন অন্তর দ্বারা সেটাকে প্রতিহত করার ব্যাপারে গবেষনা ও পরিকল্পনা করে- আর এটা হল ঈমানে নিম্ন স্তর। এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যদি দুর্নীতি দেখা সত্বে ও সেটা বন্ধ করার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে ঈমানের কোন স্তর ঐ সকল লোকদের মধ্যে অবশিষ্ট থাকেনা।

       নৈতিকতা বোধের সৃষ্টিঃ

সামাজিক জীবনে নৈতিক চরিত্রই প্রধান বিষয়, যা সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। যে সমাজের লোকজন নৈতিক চরিত্রহীন হয়ে যায় তারা পশু সমতুল্য। হক-হালাল, সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দ, জায়েজ-নাজায়েজ ইত্যাদি ব্যপার গুলো মেনে চলা এবং তার প্রতিফলন ঘটানো সমাজের প্রতিটি লোকের অপরিহার্য্য বিষয়। আর এ সকল বিষয়ে তখনি শ্রদ্ধাবোধ আসে যখন নৈতিক চরিত্র নীতি বোধ থাকে। আর নৈতিক চরিত্র সুন্দর করনে মাদরাসা শিক্ষার বিকল্প নেই। কারন এ শিক্ষা দ্বারা মানুষ কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান লাভ করে এবং এতে তার আত্মিক ও চারিত্রিক পরিশুদ্ধি সাধন হয়। রাসূল (সা) এ প্রসঙ্গে বলেছেন-

حَدَّثَنَا عَبْدَانُ عَنْ أَبِي حَمْزَةَ عَنْ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِي وَائِلٍ عَنْ مَسْرُوقٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمْ يَكُنْ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاحِشًا وَلَا مُتَفَحِّشًا وَكَانَ يَقُولُ إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلَاقًا(البخارى ১১-৩৯৪)

অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট সে যার চরিত্র তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।

       পরকালিন জবাবদিহীতাঃ

পার্থিব জগতের অবৈধ উপার্জনের ব্যপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহীতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা থাকলে দুর্নীতি ও আত্মসাৎ করারমত জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হওয়ার দুঃসাহস পেত না। রাসূল (সা) একদা সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেছেন তোমরা কি জান সর্বাপেক্ষা হতভাগ্য কে? তারা বললো যার ধন-সম্পদ নেই সেই হতভাগ্য। রাসূল (সা) বললেন না, হতভাগ্য ঐ ব্যক্তি যে কিয়ামতের দিন অঢেল নেকী নিয়ে উপস্থিত হবে কিন্তু এক এক করে বহু পাওনাদার তার তার কাছে দুনিয়ার যত সম্পদ ও অপরের হক নষ্ট করেছে তার জন্য আল্লাহর কাছে বিচার দাবী করবে। আল্লাহ তখন ঐ সকল লোকদের পাওনাকে নেকী দ্বারা আদায় করতে বলবে (যেহেতু পরকালে কোন সম্পদ থাকবে না) দেখা যাবে তার নেকী শেষ এখনো পাওনাদার বাকী, তখন আল্লাহ বলবেন তোমাদের গুনাহ তাকে দিয়ে তোমাদের নেকীর পাল্লা ভারী করো। এভাবে এক সময় ঔ ব্যক্তির গুনাহরাশি বিশাল পর্বতের মত হবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যার মাঝে এ ভীতি থাকবে সে কখনো দুর্নীতি করতে সক্ষম হবে না। ইমামগণ পারলৌকিক জীবনের জবাবদিহীতা সম্পর্কে মানুষকে পূর্ণ ধারনা দিবেন।

       পরকালিন ভীতিঃ

দুর্নীতির মূলে একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে আখেরাত বা পরকাল সম্পর্কে উদাসিন থাকা। ইহজীবন শেষে একটি অনন্তকালের জীবনে আমরা চলে যাব, যেখানে ইহ জগতের সকল কর্ম কান্ডের হিসাব হবে সে ভয়-ভীতি আমাদের মাঝে অনুপস্থিত। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

إِنَّا أَنْذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيبًا يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُولُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِي كُنْتُ تُرَابًا (৪০)

অর্থাৎ আমি (আল্লাহ) তোমাদেরকে অত্যাসন্ন শাস্তির সতর্ক করছি যেদিন মানুষ তার দুহাত যা অর্জন করেছে তা দেখতে পাবে এবং কাফেরগণ বলবে হায়! যদি আমি মাটি হয়ে যেতে পারতাম। তাই পরকালিন ভয়-ভীতির অভাবে মানুষ দুর্নীতির সুযোগ পায়।

       অর্থ লিপ্সা ও উচ্চাভীলাষ বর্জনঃ

দ্বীনি শিক্ষা মানুষকে পরকালিন বিষয়ে উৎসাহ প্রদান এবং ইহকালিন সুখ সমৃদ্ধি ও ধন-দৌলতের প্রতি অঘাদ মোহকে হ্রাসকরে। এর বাস্তব কারন পার্থিব জগতের মোহ সকল মানুষের সত্বাগত ভাবেই জেগে ওঠে। তাই এ ব্যাপারে কোন উৎসাহ না দিয়ে পরকালিন বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। বলা হয়েছে- كن فى الدنيا كانك غريب اوعابر سبيل অর্থাৎ পৃৃথিবীতে বসবাসের ক্ষেত্রে এমন হও যেন তুমি নিংস্ব অথবা পথের পথিক। কুরআন মজীদে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ (১৩الحجرات) অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বোপেক্ষা সম্মানিত যে তোমাদের মাঝে বেশী আল্লাহ ভীরু। রাসুল (সা) এর এ সকল বাণী ছাড়াও বহু আয়াত ও হাদীস দ্বারা মানুষকে পরকালিন সম্মন্ধে প্রলুব্ধ করা হয়েছে। পার্থিব চারিত্রিক উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে ইহকালিন ও পার লোকিক সফলতা অর্জনের প্রতি বিষেশ ভাবে গুরুত্বারোপসহ দুনিয়ার মোহ থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারো মাঝে রাসূল (সা) এর এ আদর্শ থাকলে সে কখনো দুর্নীতি, কালো বাজারী, অর্থ লিপ্সা ইত্যদি অপকর্ম করতে পারে না।

       স্বজন প্রীতি রোধঃ

স্বজন প্রীতি হল দুর্নীতির অন্যতম কারন। স্বজন প্রীতির কারনে নীতি-নৈতিকতা বোধ হারিয়ে যে কোন অন্যায় কাজ করতে উদ্যমী হয়। সমাজে অসৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়। সমাজে চরম বিশৃংখলা, দুর্নীতি ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়। অপরের অধিকার কে অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ ও আত্মসাত করা হয়। রাসূল (সা) কঠোর ভাবে এ স্বজন প্রীতির বিরুদ্ধাচারন করে বলেছেন-

الخلق عيال الله فأحب الناس إلى الله من أحسن إلى عياله (البيهقى১৫-৪৯৪)

অর্থাৎ সৃষ্টিজীব সব আল্লাহর পরিবারের সদস্য আর এদের মাঝে সর্বোত্তম সে যে তার পরিবারের সদস্যের সাথে সদাচারন করে। বিদায় হজ্বের ভাষনে রাসূল (সা) বলেছেন যে, কৃঞ্চাঙ্গের উপর শ্বেতাঙ্গের কোন প্রধান্য নেই তেমনি অনারবের উপর আরবের কোন প্রধান্য নেই সব মানুষ সমান। অতএব স্বজন প্রীতি থাকলে সমাজে ন্যায় বিচার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্বজন প্রীতি দ্বারা বহু অপকার্মের সৃষ্টি হয়। এ স্বজন প্রীতি থেকে মুক্ত হতে আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন।

       ইনসাফ প্রতিষ্ঠাঃ

যে কোন ব্যাপারে ইনসাফ না থাকলে সেখানে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কোন রহমত ও বরকাত থাকে না। সামাজিক ভারসাম্যতা বিঘিœত হয় বে-ইনসাফী করার কারনে। ইসলাম মানুষকে ইনসাফ কায়েম করার প্রতি জোর তাগিদ প্রদান করেছেন। যেমন পবিত্র কুরআনের ইরশাদ হচ্ছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآَنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ (المائدة-৮)

অর্থাৎ তোমরা ন্যায় বিচার কর কেননা এটা তাকওয়ার ক্ষেত্রে অধিক নিকটবর্তি।

       ধোকা না দেয়াঃ

দুর্নীতির একটি শাখা হচ্ছে ধোকা দেয়া। ধোকা দিয়ে মানুষকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করা হয়, অথচ মানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلَاحَ فَلَيْسَ مِنَّا وَمَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا(مسلم ১-২৬৫)

অর্থাৎ সে আমার দলভূক্ত নয় যে ধোকা দেয়। ধোকা মানুষের চরম অবনতির দিকে নিয়ে যায়, অনেক অসৎ কর্মের সৃষ্টি করে। একটি দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠনে ধোকা দেয়ার মত দুঃশ্চরিত্র থেকে অবশ্যই মুক্ত হতে হবে।

       খাদ্য দ্রব্য মৌজুদ না করাঃ

ইসলাম মানব জাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। যার বাস্তব একটি দৃষ্টান্ত হল খাদ্য দ্রব্য প্রয়োজনের অধিক পরিমানে মৌজুদ রেখে অন্যকে কষ্টের মধ্যে নিপতিত করা বা মূল্য বৃদ্ধি করার মাধ্যমে জন দূর্ভোগ সৃষ্টি করাকে সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে ইসলাম। এ সম্পর্কে রাসূল (সা) এর ঘোষণা হচ্ছে-

مَنْ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ(مسلم ৮-৩১২ )

অর্থাৎ ‘মুল্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে খাদ্য-দ্রব্য মৌজুদ কারী আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়’। তেমনি অপর একটি হাদেিস বর্ণিত আছে রাসূল (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন খাদ্য-দ্রব্য মৌজুদ করে রাখে সে আল্লাহ হতে সম্পর্কহীন হয়ে যায়, আল্লাহ তার সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না।

       ওজনে ফাঁকি না দেয়াঃ

বস্তু ক্রয়-বিক্রয়, আদান-প্রদান, এ সকল ক্ষেত্রে যেহেতু বস্তু ওজন করে দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে যদি সচ্চতা না থাকে এবং ফাঁকী দেয়া হয়, ইহা সামাজিক জীবনে মানুষের চরম ক্ষতি ও চারিত্রিক অধঃপতনের কারন হয়ে দাড়ায়। এক্ষেত্রে ওজনের ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র আল-কুরআনে যেমন আল্লাহর বাণী হচ্ছে-

وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا (سورة الإسراء-৩৫)

অর্থাৎ তোমরা সঠিক ভাবে ওজন করে দাও। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন-

وَأَقِيمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيزَانَ (سورة الرحمن-৯)

অর্থাৎ  তোমরা দাড়ি-পাল্লায় বিশৃংখলা করো না, ইনসাফের সাথে সঠিক ভাবে ওজন কর এবং ওজনে কম দিও না। রাসূল (সা) সৎ ব্যবসায়ী ও যারা ওজনে ফাঁকী দিবে না তাদের ক্ষেত্রে বলেছেন-

التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الْأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ(الترمذى৪-৪৭১)

অর্থাৎ সত্যবাদি ও বিশ্বাসী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, শহীদ ও সত্যবাদীদের সাথে হবে। আল্লাহ তায়ালা অন্য এক আয়াতে ঘোষণা করেছেন, ঐ সমস্ত ব্যবসায়ী ধ্বংস হোক, যারা জনসাধারনের কাছ থেকে যখন কোন জিনিস গ্রহণ করে তখন বেশি নেয়, আর যখন অন্যদের দেয় তখন কম দেয়।

       চরিত্র সংশোধনঃ

দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠনে সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ হলো চরিত্র সংশোধন। মানুষের মধ্যে সৃষ্টিগতভাবে অর্থ-লিপ্সা, সিংসা, বিদ্ধেষ, ভোল-লালসা, পার্থিব মোহ ইতাদি গুন বিদ্যমান যার প্রমান পবিত্র কুরআনে রয়েছে-

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الْمَآَبِ (১৪ سورة آل عمران)

অর্থাৎ মানুষের জন্য নারী, সন্তান, স্তুপকৃত সম্পদ, স্বর্ন ও রৌপ্যের প্রতি মোহকে সু শোভিথ করা হয়েছে। তাই পার্থিব মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হলে প্রয়োজন চারিত্রিক উৎকর্ষতা যা মাদরাসা শিক্ষা ছাড়া আদৌ সম্ভবপর নয়। চারিত্রিক উন্নতি ছাড়া যেহেতু কোন জাতিই সফলতা লাভ করতে পারেনা বিধায় মাদরাসা শিক্ষা এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকে। রাসূল (সা) কে মানব জাতির কান্ডারী হিসেবে আল্লাহ তায়ালা সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী করে এ ধরাতে প্রেরন করেন। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা হচ্ছে-

وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيم (سورة الفلم-৪)

অর্থাৎ নিশ্চয়ই আপনি (মুহাম্মদ সা) সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী تقوى অর্জন যেহেতু অন্য কে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী করতে হলে নিজেকে সুন্দর স্বভাব ও উন্নত আচরনের অধিকারী হতে হয় তাই নবী (সা) কে সেই উন্নত আদর্শ দ্বারাই প্রেরন করেছেন। মহানবী (সা) মানুষকে প্রথম যে বিষয়টি শিক্ষা দিয়েছেন তা হল ব্যক্তির আদর্শ। কারন নবী করিম (সা) স্পষ্ট বুঝেছিলেন একটি জাতির উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করে চারিত্রিক উন্নতির উপর আর তাই তিনি ঘোষণা করেছেন যার চরিত্র সুন্দর সে পূর্ণ মুমিন। চরিত্রের উন্নতি দ্বারাই রাসূল (সা) একটি উন্নত জাতি ও উন্নত রাষ্ট্র বিশ্বের বুকে উপহার দিয়ে ছিলেন। বর্তমান সভ্যতাকে বিপর্জয়ের হাত থেকে বাচাতে হলে মানব জাতিকে ধর্ম ও নৈতিকতার দিকেই ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া আবশ্যক। দুর্নীতিবাজ যত বড়ই হোক না কেন বিচার ও আইন অনুপাতে তার শাস্তি হওয়া উচিৎ।

নৈতিক মূল্য বোধ ও দ্বীনি শিক্ষা ছাড়া জাতিকে দুর্নীতি মুক্ত করার চিন্তা অবাস্তব। নৈতিকমূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা ঐশীজ্ঞান দ্বারাই অর্জিত হতে পারে। নৈতিকমূল্য বোধ সম্পন্ন একদল জনগোষ্টী পেতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতকে বাধ্যতা মূলক করা দরকার। রাসূল (সা) প্রদর্শিত শিক্ষাই মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম। ইসলামী নৈতিকতা বোধ যদি প্রতিটি মানবের মাঝে চলে আসে তখন সমাজ থেকে দুর্নীতি স্বাভাবিক ভাবেই বিলুপ্ত হবে। আজ বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ছড়াছড়ি। এ অবস্থায় রাসূল (সা) কর্তৃক প্রদর্শিত আদর্শ অনুকরনই জাতিকে দুর্নীতির কালো হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রখ্যাত পাশ্চাত্য দার্শনিক জর্জ বার্নাডশ বলেন- “ওভ ধষষ ঃযব ড়িৎষফ ধিং ঁহরঃবফ ঁহফবৎ ড়হব ষবধফবৎ ঃযবহ গড়যধসসধফ ড়িঁষফ যধাব নববহ ঃযব নবংঃ ভরঃঃবফ সধহ ঃড় ষবধফ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষবং ড়ভ াধৎরড়ঁং পৎববফং, ফড়মসধং ধহফ রফরড়সং ঃড় ঢ়বধপব ধহফ যধঢ়ঢ়রহবংং” (যদি সকল বিশ্ব একজন নেতার নেতৃত্বে একতা বদ্ধ হত তবে মুহাম্মদ (সা)-ই হতেন সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি যিনি বিভিন্ন মতবাদ, ধর্ম এবং গোত্র-উপগোত্রের মানুষদেরকে সুখ ও শান্তির পথে পরিচালিত করতে পারতেন।

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে ইমামদের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপঃ

বাংলাদেশসহ সমগ্র পৃথিবী ব্যাপি রয়েছে অসংখ্য মসজিদ। প্রত্যেক মসজিদের ধর্মীয় কার্যাবলী সম্পাদন করতে নিযুক্ত থাকে এক বা একাধিক ইমাম ও খতিব। যিনি ঐ মসজিদের আওতাভূক্ত সকলের নেতৃত্ব প্রদান করে থাকেন। স্বভাবতই প্রত্যেক শ্রেনীর সাধারণ জনতা একজন ইমামকে সম্মানের সাথে দেখেন। তার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ভক্তি রাখেন। পৃথিবীর সকল মুসলমানগণই কোন না কোন ইমামের সথে সম্পর্কযুুক্ত। সে ক্ষেত্রে একজন ইমাম যদি একটু সোচ্চার ও সর্তক থাকেন, তাহলে তিনি দুর্নীতি দমনে যে ভূমিকা পালনে সক্ষম হবেন তা অন্য কারো পক্ষে প্রায়শই দুস্কর। তাই ইমাম সাহেবগণ ইচ্ছা করলে বিভিন্ন ভাবে আপামর জনতাকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনসহ তাদের নিয়ে সামজিক দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন।

দুর্নীতি দমনে রোধে একজন ইমাম বহু রকমের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন। নিুে তার কিছু রুপ তুলে ধরা হল।

       ফরজ নামায সমূহের পর আলোচনাঃ

যেহেতু আমাদের দেশে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের শেষে কিছু সময় নিয়ে ইমাম সাহেব মুসল্লিগণের সাথে বিভিন্ন দোয়াসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করে থাকেন। এ সুযোগে যদি ইমাম সাহেব কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে দুর্নীতির স্বরুপ এবং শাস্তি পার্থিব ও পারলৌকিক ভয়াবহতা কি? এ বিষয়ে আলাচেনা করেন, আশা করা যায় দুর্নীতি দমনে রোধে তা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

 

       জুমা’র খুতবাহঃ

প্রতি জুমা’বার অধিকাংশ মুসলমানই পবিত্র জুময়ার নামায আদায় করার লক্ষে মসজিদে উপস্থিত হয়। সে ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব যদি তার ওয়াজ বা খুতবা দ্বারা দুর্নীতির ভয়াবহতা এর শাস্তি এবং অনিষ্ঠতা সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে তুলে ধরেন তবে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে তা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

       ওয়াজ মাহফিল দ্বারাঃ

বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্র গুলোতে দেখা যায় হাট-বাজারে, গ্রাম-গঞ্জে, মাদরাসা-মসজিদে বিভিন্ন সময় ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে ওয়াজ-নসিহত করার জন্য ইমামগণকে দাওয়াত করা হয়। সে ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব সামান্য সচেতন হলে এ সুযোগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ট বক্তৃতা দিয়ে গণসচেতনা সৃষ্টি করতে পারেন।

 

       সাপ্তাহিক ও মাসিক বৈঠকঃ

ইমামগণ দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সকল মুসল্লিকে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রতি সপ্তাহে বা মাসে একবার পূর্ব ঘোষনানুযায়ী সাধারণ মুসল্লিদের নিয়ে আলোচনা রাখতে পারেন।

       কমিটি গঠনঃ

প্রত্যেক ইমাম তার মসজিদ পরিচালনার জন্য কিছু সংখ্যক জ্ঞানী-গুনীর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে পারেন। যারা মসজিদ পরিচালনাসহ সমাজিক নেতৃত্ব ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।

       সামাজিক প্রতিরোধঃ

প্রায় স্থানেই ইমাম সাহেব সমাজের অন্যতম নেতা হিসেবে বিভিন্ন প্রোগ্রাম, সামাজিক কর্ম-কান্ডে অংশ নিয়ে থাকেন। যদি ঐ সকল বৈঠকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এতে ব্যাপক ফলাফলের আশা করা যায়।

       নের্তৃস্থানীয় লোকদের সোচ্চার করাঃ

সমাজের নেতৃবর্গ যদি তাকওয়াবান, আল্লাহ ভীরু ও সৎ হয় সে এলাকা বা মহল্লায় দুর্নীতির করার দুঃসাহস কেউ প্রদর্শন করবে না। সেক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় লোকদের কে যদি ইমাম সাহেব দুর্নীতি সমন্ধে স্বচ্ছ ধারনা দিতে সক্ষম হন এবং কুরআন-হাদীসে বর্ণিত দুর্নীতির শাস্তি ও ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করেন তাহলে এতে সুদূর প্রসারী ফলাফলের আশা করা যায়।

       মসজিদ ভিত্তিক মকতব/গণশিক্ষার আয়োজনঃ

আজকের শিশু আগামী দিনের পিতা, এ ধারাকে সামনে রেখে, ইমামগণ যদি তাদের ছোট বিদ্যা শিক্ষার আসর মকতব বা গণশিক্ষা কেন্দ্রে কচিকাঁচা শিশুদেরকে দুর্নীতি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা প্রদান করেন এবং পবিত্র আল কোরআনের ও হাদীসের মধ্যে এ বিষয়ে যে সমস্ত প্রমানাদি রয়েছে তা আলোচনা করেন তাহলে ভবিষ্যতে তারা দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়ার আন্দোলনে বলিষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে।

ইসলাম মানুষের চিন্তা ও আকিদা বিশ্বাস থেকে শুরু করে সকল বিষয়ের সঠিক সমাধান দিয়েছে। দুর্নীতি একটি সমাজ বিধংসী মরণ ব্যাধী। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে ইমাম সাহেবগণ বিভিন্নমুখী কর্মসূচী পালন করে একটি সুন্দর, সভ্য আদর্শ জাতি বিনির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে দ্বীন ইসলামের সঠিক জ্ঞান ও একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন করার তাওফীক দিন। আমীন।

       তাকওয়া অর্জন করাঃ

تقوى   (তাকওয়া) শব্দটির অর্থ আত্মরক্ষা, فرط الصيامة  বা ভালো ভাবে আত্মরক্ষা, বেঁচে থাকা, বর্জন করা, পরিহার করা ইত্যাদি।

শরীয়তের পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয়- اسم لمن يقى نفسه عما يضره في الاخرة-

আখিরাতে বা পরকালে ক্ষতি করবে এ সকল কাজ থেকে নিজকে বিরত রাখার নাম তাকওয়া। (তাফসীরে বায়জাবী ১/৫)

হযরত আলী বলেন: “তাকওয়া হলো আল্পে তুষ্ট থাকা কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী চলা এবং সর্বদা মরনের জন্য প্রস্তুত থাকা।”

অন্য বর্ননায় الخوف للجليل সকল কাজে আল্লাহকে ভয় করাই তাকওয়া।

এককথায় কোন মানুষ দুনিয়ার সাময়িক লোভ-লালসা, রং-তামাশায় মত্ত না হয়ে যদি সকল প্রকারে অন্যায় থেকে নিজকে ফিরিয়ে রেখে আল্লাহর ভয়ে জীবনকে আখিরাত মুখী করে, তিনি প্রকৃত তাকওয়াবান বা মুত্তাকী।

আল্লাহ তায়ালার ভাষায়-  ان اكرمكم ……………

রসুল (সাঃ) দোয়া শিখেয়েছেন-  اللهم ان نفسى تقواها………………

“ হে আল্লাহ আমার আত্মায় পরিপূর্ন তাকওয়া দান কর।”  মানুষ যদি পরিপূর্ন তাকওয়াবান হয় তাহলে সমাজকে সকল ধরনের অন্যায়, দুর্নীতি ও অপরাধ দুর হবে ইশাআল্লাহ।

সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ইমাম প্রশিক্ষণ। গাইবান্ধা।