৩১-১২-২০০৯
মসজিদ মিশনের জাতীয় কাউন্সিলে বক্তারা
সরকার সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নাস্তিক বানাতে চায়।
দেশের শীর্ষ স্থানীয় আলেমরা বলেছেন, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে নাস্তিকদের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। তারা দেমের সেক্যুার শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভবিষৎ প্রজন্মকে নাস্তিক বানাতে চায়। কিন্তু ৯৫ ভাগ মুসলমানের দেশে কোন ধর্মহীন সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা মেনে নেয়া হবে না।
গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের জাতীয় কাউন্সিল ও ইমাম খতীব সম্মেলনে বক্তারা একথা বলেন। মসজিদ মিশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দেশের প্রখ্যাত আলেম মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক। অন্যানোর মধ্যে বক্তব্য রাখেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, বায়তুল মোকাররমের খতীব অধ্যাপক মাওলানা সালাহউদ্দীন, ইসলামী ঐক্যজোটের মাহসচিব মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা আতাউল্লাহ, আইম্মা পরিষদ সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, মাওলানা মোফাজ্জল হোসেন খান, মাওলানা আহমাদুল্লাহ, মাওলানা মাহবুবুর রহমান সহ মসজিদ মিশনের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন মহানগর, জেলার সভাপতি-সেক্রেটারীগণ। সম্মেলন পরিচালনা করেন মসজিদ মিশনের জেনারেল সেক্রেটারী ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের বিভিন্ন মসজিদের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকজনকে দিয়ে কমিটি গঠন করেছে। তিনি বলেন, আমরা এ দেশে উড়ে এসে বসিনি। এ দেশের মাটিতেই আমাদের জন্ম। সুতরাং আমরা কোন অবস্থাতেই নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা মেনে নেব না।
মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ বলেন, এই সকরার নাস্তিক মুরতাদদের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্র থেকে সজাগ থাকতে হবে।
অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক বলেন, ইসলামের বিরোধিতা করে ‘দাউদ হায়দার’ ও ‘তসলিমা নাসরিন’কে দেশ ছেড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়াতে হচ্ছে। তিনি কবীর চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন ও শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, আপনারা অতীত থেকে শিক্ষা নিন। শাহজালাল, শাহ পরানের দেশে কোন ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি মেনে নেয়া হবে না। মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, এদেশে মাদরাসা শিক্ষিতরা জাতিকে আদর্শ নাগরিক উপহার দিচ্ছে। অথচ আজ দেশে শিক্ষানীতি থেকে ইসরামী শিক্ষা ব্যবস্থা বাদ দেয়ার চক্রান্ত চলছে। তিনি বলেন যতদিন পর্যন্ত দেশের ৩ লক্ষাধিক মসজিদের মিনার হতে আল্লাহু আকবার ধ্বনিত হবে ততদিন পর্যন্ত ইসলাম বিরোধী কোন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না। মাওলানা আতাউল্লাহ বলেন, এ সরকার দিনবদলের শ্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় এসে ইসলাম বদলের ষড়যন্ত্র করছে। তারা সেক্যুলার শিক্ষানীতি বানাতে চায়। মসজিদ মিশনের ৪দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন মিশেন জেনারেল সেক্রেটারী ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী ১। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সব রকমের অশ্লীলতা, যৌন নিপীড়ন, মদ-জুয়া, হেরোইন-গাজা, ইত্যাদি বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনবরত ফেনসিডিল ও মাদকদ্রব্য আমাদানী হচ্ছে তা বন্ধে সময়মত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যুব সমাজ থেকে শুরু করে সমাজে এক এক করে মাদকাশক্ত লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। আর এতে সামাজিক বিশৃংখলা প্রকট হয়ে উঠবে। সুতরাং এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য আজকের এ সম্মেলন জোর দাবী জানাচ্ছে।
২। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ কতিপয় নীতি নির্ধারকগণ যেভাবে ইসলামের মৌলিক বিধান নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করছেন এতে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টির পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার গযবকে ত্বরান্তিত করবে। আমরা অত্যন্ত গভীর শ্রদ্ধার সাথে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান সহ সকলের কাছে ইসলামী মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস বিরোধী কোন বক্তব্য প্রদান ও কর্মসূচী না নেওয়ার জন্য জোর সুপারিশ করছি। ৩। প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষানীতি-০৯ এর বিরুদ্ধে এদেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, তৌহিদী জনতা ও বিভিন্ন স্তরের বুদ্ধিজীবী মহলের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। অতএব শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানের এদেশে ইসলাম, ইসলামী আক্বীদাহ পরিপন্থী কোন নীতি যাতে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে না থাকে এবং মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা বহাল রাখার জন্যে আজকের এ সম্মেলন সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছে। ৪। দেশের প্রায় তিন লক্ষাধিক মসজিদের ইমামগণের পে-স্কেল ও সার্ভিস রুল না থাকায় তারা বঞ্চিত। আজকের এ সম্মেলন গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মাননীয় মন্ত্রীর নিকট অবিলম্বে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সার্ভিস রুল ও পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা যাইনুল আবেদীন বলেন, অতীতে যারা যত বেশি ইসলাম বিরোধী কাজ করেছে ততো তাড়াতাড়ি তাদের পতন হয়েছে। এদেশের আলেম সমাজ অতীতে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে। যদি কোন শরীয়ত বিরোধী আইন বা কাজ করা হয় তাহলে সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে এ দেশের আলেম সমাজ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। অন্যান্য বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে নানামুখী চক্রান্ত চলছে। এর মোকাবিলায় ওলামায়ে কিরাম বিশেষ করে ইমাম ও খতীবদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
মসজিদ মিশনের জেনারেল সেক্রেটারী ড. মাওলানা খলিলুর রহমান আলমাদানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করায় মসজিদ মিশনের পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় এবং মসজিদ মিশন পরিচালিত আদর্শ হেফজখানার ১২ জন হিফজ সম্পন্নকারী ছাত্রকে পাগড়ি ও সনদ দেয়া হয় এবং বার্ষিক রিপোর্টের ভিত্তিতে লক্ষীপুর, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া ৩জেলাকে শ্রেষ্ঠ জেলা হিসেবে পৃরস্কৃত করা হয়।